ভর্তুকি দিতে নতুন করে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। একইসঙ্গে রাজধানীর প্রতিটি বাসা-বাড়িতে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসানো হবে বলেও জানান তিনি। আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনী ও বিদ্যুৎ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির কারণে এরই মধ্যে ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আরও ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে না পারলে ভর্তুকি আরও বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হবে। গত বছর আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করেছি আমরা। এ গ্যাসের দাম অনেক বেশি।’
এখনও নিজস্ব গ্যাসেরই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের যে দাম তার থেকে অনেক কম দামে গ্রাহককে সরবরাহ করা হয়। যদি দাম সমন্বয় না করা হয় তাহলে চলতি অর্থবছরেই ৫-৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আগামী অর্থবছর ৭-৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি লাগতে পারে।’
‘গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হলেও কিছু ভর্তুকি দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে আগের অর্থবছরে যে পরিমাণ ভতুর্কি দেওয়া হয়েছিল সে পরিমাণ দিলেই হবে’ বলেও মনে করেন তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘চলতি বছর আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এর উপরে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বোচ্চ ছিলো। আমাদের সিস্টেম প্রস্তুত ছিলো আরও বেশি করার। কিছু ঝড়-বাদল হয়েছে আপনারা দেখেছেন এই ছুটির মধ্যে। সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছে। অনেক এলাকাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যাপারেও কিছুটা সমস্যা ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘এবারের ২০১৯-২০২০ সালের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২৬ হাজার কোটি বরাদ্দ দেওয়া হবে। জ্বালানিতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।’
বাসা-বাড়ি ও আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গ্যাসের সব গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার দেওয়া হবে। প্রিপেইড মিটার দিলে গ্যাসের অপচয় কমে আসবে। বাসাবাড়ি ও আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। ফলে বাসাবাড়ি ও আবাসিকখাতে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ সব জায়গায় পুরান গ্যাস লাইন উঠিয়ে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এজন্য ১২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রিপেড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস সাশ্রয়ের কথা তিনি জানান।
‘আমরা আবেদন করেছি জাইকাকে সহযোগিতা করার জন্য, প্রিপেইড গ্যাস মিটার বাসাবাড়িতে একশ পারসেন্ট দেওয়া যায় কি-না সেটার ব্যবস্থা আমরা নিতে যাচ্ছি’-আরও যোগ করেন নসরুল হামিদ।
এদিকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্ককে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি) আমরা গ্যাসের দামের বিষয়টি সাবমিট করেছি। এখন সম্পূর্ণ বাল্কের উপর নির্ভর করছে তারা গ্যাসের দাম সমন্বয় করবে কি-না। আমরা অপেক্ষায় আছি।’
এসময় পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মো. হোসেইন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রতিমন্ত্রী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন এবং সবাইকে মিষ্টি মুখ করান।